শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : কোনো এক দেশের মাটিতে নয়, ইউরোপের প্রতিটি প্রান্তে ফুটবল মহাযজ্ঞের যে পরিকল্পনা এঁটেছিল উয়েফা, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ তা মাঠে গড়ানোর পথে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ‘ইউরো ২০২০।’
করোনাভাইরাসের প্রবল আঘাতে আসরটি এক বছর পিছিয়ে গেলেও নামে পরিবর্তন আসেনি। স্বাগতিক শহর কমে যাওয়ার মতো কিছু অদল-বদলের মধ্য দিয়ে অবশেষে শুরু হতে যাচ্ছে ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ আসরকে বিশেষ রূপ দেওয়ার ঘোষণা এসেছিল আজ থেকে ৯ বছর আগে। ‘ফুটবলকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার’ পরিকল্পনায় প্রাথমিকভাবে ইউরোপের ১২টি শহরে ৫১ ম্যাচের আসরটি আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেভাবেই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল সবকিছু; কিন্তু গত বছরের শুরুর দিকে সারা বিশ্বে মহামারী রূপ নেয় কোভিড-১৯। টুর্নামেন্টটি পিছিয়ে দেওয়া হয় এক বছরের জন্য।
তবে পুরনো সেই পরিকল্পনায় বদল আনা হয়নি। বরং কঠিন পরিস্থিতিতেও মাঠে দর্শক উপস্থিতি নিশ্চিত রাখতে শেষ মুহূর্তে স্বাগতিক শহরের তালিকা থেকে কাটা পড়েছে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন। ওই শহরে নির্ধারিত ম্যাচগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ ও লন্ডনের ওয়েম্বলিতে। সব মিলিয়ে ১১টি শহরে হচ্ছে এবারের খেলা।
কয়েক মাস আগে আয়োজক শহরগুলোকে উয়েফার পক্ষ থেকে বলা হয়, স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতার অন্তত ২৫ শতাংশ দর্শক উপস্থিতির পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মূলত এ কারণেই ডাবলিনকে বাদ দেওয়া হয়।
স্পেনের স্বাগতিক শহর শুরুতে ছিল বিলবাও। একই কারণে সেটিও বদলে গেছে, ওখানকার ম্যাচগুলো এখন হবে সেভিয়ায়।
শুরু ও শেষ
আগামী ১১ জুন ইতালি ও তুরস্কের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে প্রতিযোগিতাটির ষোড়শ আসর। গ্রুপ পর্ব শেষ হবে আগামী ২৩ জুন।
নকআউট পর্ব শুরু ২৬ জুন, শেষ ষোলো চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত। কোয়ার্টার-ফাইনাল হবে আগামী ২ ও ৩ জুলাই। সেমি-ফাইনালের ম্যাচ দুটি হবে ৬ ও ৭ জুলাই।
ওয়েম্বলিতে ১১ জুলাইয়ের ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে জমকালো আসরের।
আসরের ফরম্যাট
গ্রুপ পর্ব থেকে নকআউট রাউন্ডে ওঠার প্রক্রিয়াটা ঠিক ২০১৬ আসরের মতোই।
২৪টি দল ছয় গ্রুপে (প্রতিটিতে ৪টি করে) ভাগ হয়ে শুরুর ধাপে অংশ নেবে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এবং তৃতীয় হওয়া দলগুলোর মধ্যে সেরা চারটি মিলে হবে ‘রাউন্ড অব সিক্সটিন।’
গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ শেষে একাধিক দলের পয়েন্ট সমান হলে গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকা দল পরের রাউন্ডে যাবে। তাতেও পার্থক্য করা না গেলে ক্রমান্বয়ে দেখা হবে-বেশি গোল করা, বেশি জয় পাওয়া, ফেয়ার প্লে অবস্থান।
স্বাগতিক শহরগুলো
বাছাইপর্ব উতরানো দেশগুলোর বেশিরভাগ এমন গ্রুপে রাখা হয়েছে যে গ্রুপের ভেন্যু তাদের শহর।
যেমন-ইংল্যান্ড তাদের গ্রুপ ম্যাচগুলো খেলবে লন্ডনে, রাশিয়ার ম্যাচ সেন্ট পিটার্সবুর্গে, জার্মানির ম্যাচ মিউনিখে, ইতালির ম্যাচ রোমে।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম, লন্ডন, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট, স্পেনের সেভিয়া, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, রোমানিয়ার বুখারেস্ট ও স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় হবে শেষ ষোলোর ম্যাচ। আর কোয়ার্টার-ফাইনাল হবে সেন্ট পিটার্সবুর্গে, মিউনিখ, আজারবাইজানের বাকু ও রোমে।
সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল হবে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে।
১১ শহরের স্টেডিয়াম ও সেখানে অনুষ্ঠেয় ম্যাচ:
আমস্টারডাম-ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনা
এটি ডাচ চ্যাম্পিয়ন ক্লাব আয়াক্সের হোম গ্রাউন্ড। এখানে গ্রুপ পর্বের তিনটি ও শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ হবে। স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৫৪ হাজার, বর্তমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রবেশ করতে দেওয়া হবে কমপক্ষে ১২ হাজার দর্শক।
বাকু-অলিম্পিক স্টেডিয়াম
২০১৯ সালের ইউরোপা লিগে চেলসি ও আর্সেনালের মধ্যে ফাইনাল ম্যাচটি এখানে হয়েছিল। এবারের ইউরোয় এখানে তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ ও একটি কোয়ার্টার-ফাইনাল হবে। স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৬৯ হাজার, এর অর্ধেক দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বুখারেস্ট-রোমানিয়ার জাতীয় স্টেডিয়াম
এখানে তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ এবং একটি শেষ ষোলোর ম্যাচ হবে। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৫৪ হাজার, কমপক্ষে ১৩ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি মিলবে।
বুদাপেস্ট-দা পুসকাস অ্যারেনা
১১ ভেন্যুর মধ্যে এটি সবচেয়ে নতুন, উদ্বোধন হয়েছে ২০১৯ সালে। এখানে তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ এবং একটি শেষ ষোলোর ম্যাচ হবে। ৬৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটির গ্যালারি পরিপুর্ণ হওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।
কোপেনহেগেন-দা পারকেন স্টেডিয়াম
কোপেনহেগেন ফুটবল ক্লাবের ঘরের মাঠ। এখানেও তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ এবং শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ হবে। ৩৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটির ছাদ প্রয়োজনে ঢেকে রাখা ও খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ২৫ থেকে ৩৩ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে ডেনমার্ক।